শুন্যতা অতঃপর তুমি ও আমি

শুন্যতা (অক্টোবর ২০১৩)

কবি এবং হিমু
  • 0
  • ২১
আর ভাল লাগেনা।কেন যে পড়ালেখার প্রথাটা চালু হল।কি এমন ক্ষতি হত পৃথিবীর।কই পৃথিবীর আদি পিতা হযরত আদম(আঃ)তো জানা মতে পৃথিবীর কোন কলেজে পড়েন নি।তাতে কি পৃথিবির কোন ক্ষতি হয়েছে।এই ভোর বেলাতে যেতে হবে টিচার এর কাছে বাইরে আবার প্রচন্ড বৃষ্টি।আবিরের মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল।কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিল এমন সময় তার চীর শত্রু চেচামেচি শুরু করল।মাঝে মাঝে মনে হয় শত্রুটাকে খাবার দেবা বন্ধ করে দেবে। মনে মনে ভাবল টেবিল ঘড়িটার ব্যাটারি খুলে ফেলতে হবে তারপর দেখবে বেটা কেমন চেচাতে পারে।কি আর করা অনিচ্ছা সত্বে ও ছাতা নিয়ে রাস্তায় নামতে হল।
আবির শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের বিজ্ঞান ১ম বর্ষের ছাএ।বাবা অগ্রনী ব্যাংকের অফিসার,বোনটা গার্লস স্কুল পড়ে আর ছোট ভাইটি সবে মাএ ক্লাশ থ্রিতে।আর তাদের নিয়েই আবিরের সুখি পরিবার।যদি ও আবিরের মতে মধ্যবিত্তরা নাকি সুখি হতে পারে না।সুখ নাকি বিরাজ করে ধনী আর গরীবের মাঝে।আর মধ্যবিত্ত তো মাঝামাঝি না আছে সুখ না আছে দুঃখ।
ভোর বেলা এমনি তেই রিক্সা পাওয়া যায় না তার উপড় আবার বর্ষাকাল।মাঝে মাঝে ভাবে রিক্সার চালক হলে মনে হয় ভাল হতো।বৃষ্টির দিন ভাড়াটা বেশি মিলতো তার উপর আবার স্কুল-কলেজের সুন্দরি মেয়ে পাসেঞ্জার।খুসগল্প করতে পারতো।
মাস্টার পাড়া থেকে একটি রিক্সা বের হতে দেখল।আর সাথে সাথে সিগনাল।রিক্সা তার সিগনাল না মেনে চলে গেল।রিক্সার পেছনে লেখা প্রাইভেট।মানুষের যে আজকাল কি হয়েছে বুঝি না।সবকিছুতেই প্রাইভেট লেখা চাই।রিক্সা থেকে হাসি মুখে পেছন ফিরে তাকালো একটি মেয়ে।রাগে আবিরের গা কাঁপছে।শালা,কপাল!মেয়েরা ও তার এই অসহায় অবস্থা দেখে মুচকি হাসে।
এমনি করে দিনগুলো কেটে যায়।সকালে মাস্টার পাড়া থেকে রিক্সা বের হলে সে আর সিগনাল দেয় না।বর্ষার অত্যাচার শেষ হতে না হতেই শীত বুড়ির আগমন।আবির শীতকালকে বুড়ী বলে ডাকে কারন এ সময় সব বয়সের মানুষ নাকি বুড়ো হয়ে যায়।বুড়ো মানুষের ন্যায় সবাই ঘর থেকে,লেপের নিচ থেকে বের হতে চায় না,শরীরের ত্বক হয়ে যায় খসখসে।
এক কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালে আবির রাস্তায় দাঁড়িয়ে।শরীরে পাতলা একটি টি-শার্ট।এটাই আজকালকার ফ্যশন।শীতে কাপবো কিন্তু গরম কাঁপড় গায়ে দেব না।
মাস্টার পাড়া থেকে কোন রিক্সা বের হল না।অবাক করা ব্যাপার।এমন তো হয়নি এ ৬মাসে।বেশ কিছু সময় পর কুয়াশা ভেদ করে কালো একটি ছায়া এগিয়ে আসতে দেখল।প্রথমে আবির কিছুটা ভয় পেল কারন এই পাড়াটাতে প্রায় সবাই হিন্দু তার উপড় আবার আছে কালি মন্দির।এই ভোরে কালি বের হল না তো!আস্তে আস্তে মেইন রাস্তার দিকে এগিয়ে আসছে।আবির কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।কষে এক দৌড় লাগাবে কিনা। এমন সময় কুয়াশার চাঁদর ভেদ করে একটি মূর্তি বের হল।আবির স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে রইল ।তার শরীরের রক্ত প্রবাহ জোড়ে বইছে,গলাটা শুকিয়ে গেল।সময় যেন থমকে গেছে।অবিরত ডেকে চলা বেওয়ারিশ কুকুরগুলোও স্তব্ধ।
রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে।না,কোন কালী বা পেত্নী ও না।এ যে মার কাছে গল্পে শোনা নীল পরী।তবে সামনে দাঁড়ানোটা নীল নয় কালো পরী।মর্তলোকে এতো সুন্দর নারী থাকতে পারে তার যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।কোথা থেকে একটি রিক্সা এসে সেই মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গেল।
কুকুরের ডাকে বাস্তবে ফিরে এল।তারপর থেকে প্রতিদিন সে দাঁড়িয়ে থেকেছে।কখন ও ছাতা হাতে কখন ও বা কুয়াশা ঢাকা ভোরে।এমনি করে একদিন রিক্সা আসা বন্ধ হয়ে গেল।দিন যায়,সপ্তাহ পেরিয়ে মাস।কিছু না বলে হারিয়ে যায়,পরীটি।
দুর্গাপূজা এলো বলে।আর পূজা এলেই আবিরদের গ্রুপটার আনন্দ অনেকগুন বেড়ে যায়।বাড়ী থেকে রাতে বাইরে থাকার অনুমতি মিলে,মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে ঘুরে সুন্দরী মেয়ে দেখা।পূজোর সময় শ্রীমঙ্গলের সব সুন্দরীদের দেখা মেলে।এমনি করে তার দেখা পরীটর সাথে আরেকবার দেখা হয়।আবার হারিয়ে যায়।সেই থেকে আবিরের মনটা খারাপ।তার মানে পরীটা হিন্দু।আর সে মুসলিম।
বন্ধুদের সাথে শ্যামা হোটেল এ বসে আড্ডা,বিকেলে শ্যামলী পাড়ায় সুন্দরী মেয়েদের বাসার সামনে হাটাহাটি,সন্ধে বেলায় রেলওয়ের ওভারব্রীজে বসে যাএী দেখা নয়তবা মতিন মার্কেটে আশা নতুন ছবির সিডির খোঁজ।এসব কিছুই আজকাল আবিরের ভাল লাগে না।বিকেল বেলা দূর পাহাড়ের চূড়ায় যখন সূর্যটা অস্ত যায়,দিবসের শেষ নিলীমাটুকু যখন ফিঁকে হয়ে যায় তখন আবিরকে আকঁড়ে ধরে শূন্যতা।
কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠান আজ।এই দিনটি যে কেন কলেজ কতৃপক্ষ পালন করে সে বুঝে পায় না।নবীন বরন মানেই সেদিন কলেজে রাজনৈতিক মারামারি।নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসা ছাএগুলো এক পলকে বুঝে ফেলে তারা আজ মুক্ত।টিচারের বেতের বাড়ি খাবার ভয় নেই,নেই কোন শাসন।করবে সে যা চাইবে তার মন যখন তখন।আজ আবার দেখা দিল সেই কালো পরী।তবে আজ কালো নয় আজ গোলাপি পরী।পরী আবারির দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসে। পরীর হাসিতে তার শূন্যতা পালিয়ে যায় নাম না জানা কোন গ্রহে,মঙ্গলে যখন বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত প্রানের অস্তিত্ব জানতে,তখন তারা জানতে ও পারলো না পৃথিবীর এক মানবের মনে জন্ম নিল নতুন এক গ্রহ।আর এ গ্রহের নাম নন্দিনী।একদিন মেয়েটির মুখোমুখি দাঁড়ালো।
তোমাকে কিছু কথা বলব শুনবে।
আমার যে কিছু তারা ছিল।আজ খুব ব্যস্ত।
সামান্য কিছু কথা।
ঠিক আছে শুনি,তবে তাড়াতাড়ি বলবেন যা বলার আমি আবার ভনিতা পছন্দ করি না।
আমি মুসলিম।জানি না আমি মুসলিম হয়ে জন্ম নিতে চেয়েছিলাম কিনা।বিধাতা আমায় মুসলিম করে পাঁঠিয়েছেন।সেটা তো আমার ভূল নয়।আমার কেবলি তোমাকে ছাড়া শূন্যে মনে হয়।এর নাম যদি ভালবাসা হয় তবে তাই।
ভালবাসা!নন্দিনি অবাক হয়।আমার সময় কোথায় ভালবাসার।এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় আমার নাই।সরি আমি চললাম।
আবির কষ্ট পেয়েছে কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি বা দেবদাস ও হয়নি।জীবন নিয়ে সে কখন ও ছবি আঁকে না।আকাশ কুসুম স্বপ্ন ও সে দেখেনি কিংবা বলা যায় তার সাথে লেগে থাকা মধ্যবিত্ত নামক শব্দটি তাকে কোন দিনও সাহস দেয়নি নতুন কিছু ভাবার।যদি জীবনটা গল্পের মতো হত কিংবা ছবির মতো।তা হলে হয়ত বা গল্পের শেষ লাইনে পরীর আর তার একটা সুখের সবপ্ন থাকতো।
সামনেই পরীক্ষা।দেখতে দেখতে ফাইনাল তারপর রেজাল্ট।শ্রীমঙ্গল এর পাঠ চুকিয়ে সোজা সিলেট।সিলেট এম সি কলেজ।কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে।আবিরের গ্রুপের সবাই প্রেমের তরি ভাসিয়ে দিয়েছে কিন্তু আবিরের মন পড়ে আছে সেই কালো পরীর কাছে।তার পরী ছাড়া আর কিছু ভাল লাগে না।পরিই তার ভালবাসা,পরীকে নিয়ে কল্পনায় তার দিন চলে যায়।
আজ প্রায় দুবছর পর পরীর সাথে আবার দেখা।পরী আবার ও তার কলেজে।প্রতিদিন দেখা হয়,কথা হয়না।আবিরের কষ্টটা বাড়তে থাকে।মহাকালের হাত ধরে সময় বয়ে যায়।বর্ষা শেষে আসে শীত তারপর বসন্ত।সব কিছু বদলায় কেবল বদলায় না আবিরের মন।পারছে না আর সবার মতো কোন মেয়েকে নিয়ে ভালবাসার নৌকা ভাসাতে।
একদিন পাতা ঝরা মধ্য দূপুরে কালো পরীটি তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
আজ বিকেলে কি কিছুটা সময় হবে আপনার?নন্দিনি প্রশ্ন করলো।
সময়।হবে হয়ত।কেন?
কিছু বলার ছিল আপনাকে।
আমাকে!আবির অবাক হয়।আসলে শোনার মতো কিছু কি আছে?বিধাতা তো কিছু রাখেনি।
সেটা আপনার ব্যাপার।বিকেল পাঁচটায়,সুরমার তীরে মানে পুরাতন ব্রীজটার নিচে।পারলে আসবেন।এই বলে নন্দিনি চলে যায়।
মনের অজান্তেই আবির গিয়ে হাজির হল।অনেক মানুষ হয় বিকেল বেলা।পরিবার নিয়ে,সদ্য বিবাহিত,প্রেমিকযুগল বা বন্ধুরা আর হরেক রকম হকার।সে তীরে বসে থাকে।কিছু সময় পর একটি মেয়ে এসে তার পাসে বসে।
আমি প্রতিদিন ছেলেটিকে দেখি।কখন ও ছাতা হাতে কখনও বা ঘন কুয়াশায় কাঁপতে।জানি সে দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে দেখার আশায়।প্রতিদিন ভাবতাম আজ বুঝি ছবি বা গল্পের নায়কের মতো সে আমার রিক্সার সামনে এসে দাঁড়াবে।আমি তার ভয়ে কুঁকড়ে যাব।সে বলবে আমি তোমায় ভালবাসি।কিন্তু না ছেলেটি কিছু বলে না।এক রাতে পূজা মন্ডপে দেখা।সেদিন সারা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি,ছেলেটি হিন্দু বলে।আমার চারিদিকে শূন্যতার বিশাল সাগর,কতবার,কতবার চেয়েছি পাড়ি দিতে একাকি।একদিন ঘামে ভেজা দুপুরে সে জানালো সে মুসলিম হয়ে জন্মেছে।বোকা ছেলেটা সেদিন অজানা সুখে আমার চোঁখের কাপন দেখেনি।আজ আমার হাতে অনেক সময়।আজ আমি আবার সেই বোকা ছেলেটির পাশে।জানি না সে আজ ও আমায় ভালবাসে কিনা।আর বোকা ছেলেটিকে বলতে চাই আমার নাম তানিয়া তাবাসসুম নন্দিনি।
গূধুলীর শেষ আভা টা মুছে যাচ্ছে,সাদা বলাকাগুলো নীড়ে ফেরায় ব্যস্ত।রাতের আকাশ ভারী হবে শূন্যতায় ডুবে থাকা মানুষগুলোর দীঘশ্বাসে।বোকা ছেলেটির হাতে কালো পরীর হাত,কাধেঁ মাথা রেখে তাকিয়ে আছে সুরমার ঘোলা জলের দিকে।যেখানে কিছু সময় আগে তারা ডুবিয়ে দিয়েছে শূন্যতাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক ভালো লাগলো । শারদীয়া ও ঈদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা ।

২৭ জুলাই - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪